দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাসের বেশি সময় পর খুলেছে কক্সবাজারের সকল পর্যটন কেন্দ্র। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল না বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। তাই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে পর্যটকরা। এতে আগত পর্যটকরা সাগরের বিশালতায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। স্বস্তি ফিরেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাঝেও। দীর্ঘ সময় পর পর্যটকরা ছুটে আসায় দারুণ খুশি ব্যবসায়ীরা। তবে আশা করছেন; দ্রুত লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাাঁড়াবেন তারা। আর বিধি-নিষেধ অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রশাসন। বাড়ানো হয়েছে হোটেল মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি। টহল থাকছে ভ্রাম্যমান আদালত। সাগরের বিশালতা আর নোনাজল; বালিয়াড়িতে ছোটাছুটি। এসবের টানে সৈকত শহর কক্সবাজারে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস সৈকতে প্রবেশে ছিল নিষেধাজ্ঞা। বন্ধ করে দেয়া হয় সকল পর্যটন কেন্দ্র। খুলতে পারেনি সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল মোটেল। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) হতে তুলে নেয়া হয় সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। যার কারনে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে শত শত পর্যটক। মেতে উঠে সৈকতের নোনাজল ও বালিয়াড়িতে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আগত রিদুয়ান বলেন, দীর্ঘদিন কোথাও ঘুরতে বের হতে পারছিলাম না। করোনার ভ্যাকসিন দুই ডোজ নেয়ার পর দেখি কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রও খুলে দিয়েছে। সেহেতু কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসে।
খুবই ভাল লাগছে; আবহাওয়াও চমৎকার। চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী-৩ সন্তান নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসলাম। কারণ দীর্ঘদিন করোনার কারণে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বের হওয়া যায়নি। এখন সুযোগ পাওয়া মাত্র ঘুরতে চলে আসা। তবে আশা করছি; খুব দ্রুত এই মহামারি কেটে যাবে, মানুষ আবারও মুক্ত আকাশে বাতাস নিবে। ঢাকা থেকে আসা ইলিয়াছ হায়দার বলেন, খুবই ভাল লাগছে বেড়াতে আসতে পেরে। কারণ বদ্ধ ঘরে অনেকদিন বন্দি ছিলাম। এখন বিশাল সাগরের সামনে অনেক স্বস্তি পাচ্ছি। ঢাকার মতিঝিল থেকে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, সৈকতে বেড়াতে কার না ভাল লাগে। দীর্ঘ সময় ঢাকা থেকে বের হয়ে কক্সবাজার আসলাম। এসে সাগরের নোনাজলে গোসল করলাম। বেশ আরাম পাচ্ছি আর বেশ ভাল লাগছে। তবে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পর্যটক আসায় সবচে বেশি খুশি পর্যটন সংশ্লিস্ট ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘসময় তারা ফেলছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। সৈকতের ফটোগ্রাফার, বীচবাইক চালক, হকার ও শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ীরা দ্রুত লোকসান কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছেন।
সৈকতের বীচ বাইক চালক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে গেল সাড়ে ৪ মাস সৈকতে ব্যবসা বন্ধ ছিল। বন্ধের এই সময়তে সবাই অসুবিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। এখন কক্সবাজারের সকল পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়েছে। এখন আশায় বুক বাঁধছি, পর্যটক আগমন বাড়লে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারব। সৈকতের ফটোগ্রাফার হৃদয় বলেন, লকডাউনের কারণে অনেক দিন সৈকতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যার কারণে পর্যটকও কক্সবাজার আসেনি, আমাদের ব্যবসাও হয়নি। এখন সৈকতে প্রবেশে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। খুবই ভাল লাগছে। খুবই খুশি হয়েছি। পর্যটক আসলে ভাল ব্যবসা হবে এবং পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারব। সৈকতের জেড স্কী চালক রহিম বলেন, সবে মাত্র সৈকতে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পর্যটকের আগমন আরও বাড়বে। আশা করি, লোকসান কাটিয়ে দ্রুত ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরেজমিনে দেখতে সৈকতে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এসময় তিনি সৈকত এলাকা ঘুরে দেখেন। পর্যটক ও সৈকতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করেন এবং সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশনা দেন।
এসময় জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, হোটেল মোটেল রিসোর্টগুলো কোন অবস্থাতেই ৫০ শতাংশের বেশি বুকিং নিবেন না। কারণ প্রশাসন কমিটির মাধ্যমে, মোবাইল কোর্টের অভিযানের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। ধারণ ক্ষমতার বাইরে কোন হোটেল রুম বুকিং নিচ্ছে কিনা, দিচ্ছে কিনা, কেউ অবস্থান করছেন কিনা। কেউ যদি এর বাইরে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর করোনার বিধি-নিষেধ অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে পর্যটক, পর্যটন ব্যবসায়ী সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে গেল পহেলা এপ্রিল থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় কক্সবাজারের সকল পর্যটন স্পট। ফলে গেল সাড়ে ৪ মাসে কক্সবাজারের পর্যটনের সবখাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।